*চিরন্তন*
- তাছনীম বিন আহসান
নদীর স্রোত কত স্বপ্ন বহন করে!
রাজার কেল্লা, কৃষকের ঘাম—
আর সিন্ধুর ঢেউয়ে মিশেছে যে প্রেম,
যুদ্ধ শেষে নিস্তব্ধ রাতে, কত কণ্ঠস্বর থেমে যায়,
সময়ের গহ্বরে বীরের নামও ঝাপসা হয়ে যায়।
তবু মহাকাল কেবল এক নামেই ডাক দেয়—প্রেম।
ব্যাবিলনের স্তম্ভে জমে থাকা রক্তের গন্ধ,
মহাকালের কণ্ঠে ভেসে আসে দাসত্বের আর্তনাদ—
চোখে আঁধার, বুকে জমাট মৃত্যুর মতো ঠাণ্ডা,
চাষির হালে বাঁধা স্বপ্ন-
শিল্পীর তুলির আঁচড়ে ওঠে দিগন্তজোড়া চিত্রপট।
ক্লান্ত পথিক তবু পথেই মরে,
সে বাঁচে কেবল এক আশায়—প্রেম।
শিল্পীর তুলিতে আঁকা এক ছবি,
কবির কবিতায় লেখা এক গান,
রাত শেষে ব্যথিত গানের সুর থেমে যায়,
কারো নেই কিছুই বলার, সমাজ আজও গভীর ঘুমে,
দরিদ্র বালক এখনো উপোসে শোয়, অভাবের গল্প মিশে যায়।
তবু মানুষ চায় কেবল এক সান্ত্বনা—প্রেম।
শোষকের দম্ভভরা হাসি, বঞ্চিত জনের দীর্ঘশ্বাস-
মায়ের কোলে মাথা রেখে শান্তি খুঁজি,
বাবার ছায়ায় জীবনের পথ দেখি,
বন্ধুর সাথে সুখ-দুঃখ ভাগ করি,
নিয়তির খেলা বুঝতে গিয়ে জ্ঞানের শেকলে বাঁধি প্রাণ,
স্বপ্নের দামে বিকায় মানুষ, দুঃখ সাজায় নতুন গান।
তবু অন্তর খোজে কেবল এক ভাষা—প্রেম।
আজও রাজপথে দাঁড়িয়ে ক্রীতদাস কয়,‘আমরা কারো নই’
কৃষকের মুখে জমাট কষ্ট, সময়ের খেলা বড় নির্মম!
আকাশের তারা একে একে নিভে যায় যন্ত্রণা বুকে,
বিচারকের গম্ভীর বাক্য, সত্য মিথ্যার কাঁটায় বন্দি,
উদ্বাস্তু শিশুর কান্না শুধু বাতাস বয়ে নিয়ে চলে,
এক বেলা ভাতের স্বপ্ন দেখে সে,
প্রভাতে রোদের আলো ফোটে, আঁধার জমে থাকে চোখে।
তবু সে দেখতে চায় কেবল এক আলোতে—প্রেম।
যুদ্ধক্ষেত্রে পতাকা ওড়ে, কত রক্তে ভিজে একাকার,
কত নারীর স্বপ্ন ছিঁড়ে বীরের গল্প লেখা হয়!
রক্তমাখা সূর্য ওঠে, কিন্তু জীবন ফেরে না,
দুর্বলের কান্না লুকিয়ে থাকে রাজনীতির ছলনায়!
তবু মানুষ হাঁটে কেবল এক পথ ধরে—প্রেম।
শহর, গ্রাম, রাজপথে তৈরি হয় ইতিহাসের চিত্রনাট্য,
একই ঘুর্ণিতে বারবার হারায় মানুষের অস্থায়ী সত্য।
নদীর মত সময় বয়ে যায়, সব হারিয়ে যায় অতলান্তে,
মাটি জানে, জীবন জানে, আর হবে না নীড়।
তবু সে গড়ে কেবল এক স্বপ্ন—প্রেম।
অভিমানী কবির কলম থামে সমাজের ছলনায়,
ভিক্ষুকের রুটি কেড়ে নেয় কেউ,
কিন্তু মন্দির-মসজিদ একসাথে বলে, ‘মানুষ হলো সবার আগে’,
অন্যায়-নীতির বেড়াজালে আবদ্ধ সভ্যতা,
তবু সে জাগে কেবল এক বিশ্বাসে—প্রেম।
অরণ্যের পশুও জানে ভালোবাসা, মানুষ কেন বোঝে না?
ক্ষমতার নেশায় বুদ তারা, তবু মাটির ডাক শোনে না।
কৃষকের ঘামে জন্ম নেয় যে ধান, শোষকেরা লুটে খায়,
কবির কলমে জন্ম নেয় যে কাব্য, মুর্খেরা ভুলে যায়,
তবু ঈশ্বরের করুণা বৃষ্টি হয়ে ফেরে আশার আশ্রয়ে।
যা পেয়েছি তার জন্য কৃতজ্ঞ আমি,
যা আছে তাই নিয়ে আমি সুখী,
সর্বশেষ আকাঙ্খা শুধু—প্রেম।