পাত্রী দেখা
- সুখ সাহারা ( রেবেকা আক্তার রুমা )
মায়ের সাথে পাত্রী দেখতে এসেছে রুদ্র। নাহ বিয়েটা এবার করে ফেলা দরকার। মেঘে মেঘে বেলা তো আর কম হল না।
আগে প্রেম টেম যা করেছে করেছে,
এবার আর কোন প্রেম টেম নয়, সরাসরি বিয়ে।
যাস্ট বিয়ে ইজ রিয়েল, বাকি সব ঘিয়েল!
কিন্তু বিয়ের বাজার যে এত চড়া রুদ্রের তা জানা ছিল না। এত মেয়ে দেখছে কিন্তু কোন মেয়েই মনের মত পাচ্ছে না। প্রেম করার জন্য হাজার হাজার মেয়ে কিন্তু বিয়ের সময় একটাও নেই। যে কোন মেয়ের সাথে প্রেম করা যায় কিন্তু বিয়ে তো আর যাকে তাকে করা যায় না। বিয়ে হচ্ছে সারাজীবনের ব্যপার স্যাপার। দেখে, শুনে, বুঝে তারপর করতে হবে।
ইদানীং নিজের উপর আর ভরসা করতে পারছে না রুদ্র। তাই সব দায় ভার পরিবারের উপর ছেড়ে দিয়েছে!!
সে শুধু গিয়ে কবুল বলবে।
কবুল! কবুল! কবুল!
টাকাও যাচ্ছে জলের মত। মেয়েকে দেখতে গেলে খালি হাতে তো আর যাওয়া যায় না, মিষ্টি নিয়ে যেতে হয়। যুগ আধুনিক হলেও এখনো মেয়েরা পানের বাটা নিয়ে,
মাথায় ঘোমটা দিয়ে সামনে আসে। পানের বাটা তো আর খালি ফেরত দেয়া যায় না…
হাজার হোক প্রেস্টিজ বলে একটা কথা আছে!!! সেটা ঠিকঠাক রাখতেই
টাকা দিতে হয়।
যে মেয়েকে বেশী ভালো লাগছে তাকে দিচ্ছে এক হাজার এক টাকা, আর যাকে কম ভালো লাগছে তাকে দিচ্ছে পাচঁশত এক টাকা।
সামনে বসা মেয়েটাকে রুদ্রের মোটামুটি রকম লাগছে। পাচঁশ দেবে নাকি হাজার, বুঝতে পারছে না।
আজকালকার গার্জিয়ানরা বেশ স্মার্ট। ছেলে মেয়েদের আলাদা কথা বলার সুযোগ করে দেয়। গার্জিয়ানদের ভাবটা এমন, যেন আজকে মেয়ে দেখতে এসেছে আর কালকেই বিয়ে।
রুদ্রকেও সেই মেয়েটার সাথে কথা বলার সুযোগ করে দেয়া হল-
রুদ্র মনে মনে সব প্রশ্ন গুছিয়ে রেখেছে, মেয়ে তো আর কম দেখেনি। কোন টাইপ মেয়েকে কি ধরনের প্রশ্ন করতে হবে রুদ্রর মুখস্ত হয়ে গেছে!!
দু’বার কেশে গলা পরিস্কার করে নিয়ে প্রশ্ন শুরু করল রুদ্র-
-নাম কি আপনার?
ফ্যানের বাতাসে ইতিমধ্যে মেয়েটার মাথার ঘোমটা সরে গেছে অথবা ইচ্ছাকৃত সরিয়ে ফেলেছে।
মেয়েটা সামনের চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দিতে দিতে উত্তর দিল-
-ঐশী জামান। ফেসবুক ভার্সন নীল বিষাদের ছায়া…
-নীল বিষাদের ছায়া কি কোন নামের ক্যাটাগরিতে পরে???
-জি, আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
বলেই মেয়েটা ফিক করে হেসে দিল।
এই প্রশ্নর সাথে হাসির কি সম্পর্ক রুদ্রর বোধগম্য হল না।
রুদ্র এবার গম্ভীর হয়ে প্রশ্ন করল-
-না কিছু না। বলছিলাম, আপনার নাম রাখার সময় কি আকীকা করা হয়েছিল??
-অবশ্যই।
-আকীকা করে নিশ্চয়ই “নীল বিষাদের ছায়া” এই টাইপ নাম রাখা হয়নি???
মেয়েটা এবার বেশ জোড়েসোড়ে হেসে উঠল।
-কি যে বলেন!!
‘নীল বিষাদের ছায়া’ কেন রাখবে। আপনাকে বললাম না, আমার নাম ঐশী জামান।
ফেসবুকে আইডি খোলার সময় কি নাম দেব, বুঝতে পারছিলাম না, তাই
নীল বিষাদের ছায়া দিয়ে খুলেছি।
আচ্ছা, আপনার ফেসবুক আইডি নেই???
-জী আছে। তবে কোন ফেইক আইডি না। আমার নামেই আমার রিয়েল আইডি আছে।
মেয়েটা এবার বেশ রেগে গেল।
-আপনি কি বলতে চাচ্ছেন বলেন তো???
আমি ফেইক….???
-সে আপনি ভালো জানেন।
.
.
.
সেদিনের মত পাত্রী দেখার সেখানেই ইতি ঘটেছিল।
পরের পাত্রী দেখতে গেল কফিশপে।
কফিতে চুমুক দিয়েই রুদ্রর থু করে ফেলে দিতে ইচ্ছে করছিল!! কফির নামে চিনির শরবত দিয়ে রেখেছে। ১৮০ টাকা দামের কফি ফেলে দিতেও মায়া লাগে। এইসব নামী দামি কফিশপে আসাই ভুল। এর চেয়ে বাড়িতে এই টাকায় চার মগ কফি বানানো যেত। টাকার কথা চিন্তা করে রুদ্রর খুব কষ্ট লাগছে!!
তাছাড়া সামনে এমন হুরপরীর মত একটা মেয়ে বসে থাকলে বিষও ঢোক করে গিলে ফেলা যায়,
এ তো সামন্য কফি নামের চিনির শরবত। রুদ্র হাজার কষ্টেও ঢোক গিলল!!!
মেয়েটাকে ভদ্রতা করে রুদ্র জিঙেস করল-
-আর কিছু খাবেন??
মেয়েটা লাজুক হাসি দিয়ে বলল-
-না। আর কিছু খাব না।
রুদ্র মেয়েটার কন্ঠস্বর শুনে মুগ্ধ। মেয়েটা দেখতে যেমন হুরপরী, কন্ঠও মাসআল্লাহ!!
গায়িকাদের মত রিনরিনে কন্ঠস্বর।
সাধারনত যেসব মেয়ে দেখতে সুন্দর হয় এদের কন্ঠস্বর সুন্দর হয় না। এর আগে একটা মেয়েকে দেখেছিল রুদ্র। দেখতে খুবই সুন্দর কিন্তু কন্ঠস্বর হাঁসের মত।
যখন কথা বলছিল, তখন মনে হচ্ছিল হাঁস কথা বলছে।
প্যাঁক! প্যাঁক! প্যাঁক!
যাক, অবশেষ রুদ্র একটা মনের মত মেয়ে খুঁজে পেল, যেমনটা সে খুঁজছিল!!
খুশীতে মনের ভিতর পায়রাগুলো বাক-বাকুম করে ডাকতে শুরু করেছে রুদ্রর। সে এবার একটু জোড় গলায় মেয়েটাকে বলল,
-লজ্জার কিছু নেই। কি খাবেন অর্ডার দিন।
মেয়েটা হাসি হাসি মুখ করে বেয়ারাকে এবার বেশ কিছু খাবার অর্ডার করল।
রুদ্রর সেদিকে খেয়াল নেই। মেয়েটার সিল্কি চুলে রুদ্রর চোখ আটকে গেছে। চুলে কৃত্রিম আলো লেগে যে প্রতিফলন হচ্ছে, রুদ্র মনযোগ দিয়ে তাই দেখছিল!!
হঠাৎ মেয়েটার কথায় ভ্রম কাটল রুদ্রর।
-কিছু বলছেন না যে??
– এ্যা! কি বলব? আমার কিছু বলার নেই।
রুদ্রের ভ্যাবাচ্যাকা অবস্থা দেখে মেয়েটা আবার খিলখিল করে হেসে উঠল! আহা! কি সুন্দর হাসি। পরান জুড়িয়ে যায়।
এরমধ্যেই খাবার দিয়ে সামনের টেবিলটা ভর্তি হয়ে গেছে। খাবারের দিকে তাকিয়ে রুদ্রের বুকের ভিতর ধ্ক করে উঠল। এত খাবার কি মেয়েটা একাই খাবে? আর বিলের কথা তো চিন্তাই করতে পারছে না!
এসব চিন্তা করতে করতেই, একটা ইয়ো ইয়ো টাইপ কম বয়সী ছেলে এসে হাজির। ছেলেটি আসার সাথে সাথে মেয়েটি রুদ্রর সাথে ছেলেটিকে পরিচয় করিয়ে দিল, নাম সজল। সজল মেয়েটির বন্ধু। একসাথে পড়াশুনা করে।
ছেলেটিকে দেখে রুদ্রর মেজাজ একশ ভোল্টে জ্বলে উঠল। পাত্রী দেখতে এসে এ কোন আপদ! ছেলেটি মেয়েটির সাথে মাখামাখি করে কথা বলছে, রুদ্রের অসহ্য লাগছে, তবুও হাসি হাসি মুখ করে আছে। দেখতে দেখতে টেবিলে রাখা সব খাবার শেষ হয়ে গেল। যাবার আগ মুহুর্তে মেয়েটি রুদ্রকে কাঁচুমাচু মুখে বলল, সজল নামের এই ছেলে তার বয়ফ্রেন্ড। বাসা থেকে জোড় করে তাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে। বিয়ের জন্য তাকে বেশী জোড়াজুড়ি করলে সে এই ছেলের সাথে পালাবে…..
রুদ্র সেদিন বাসায় এসে ২১ বার কান ধরে উঠাবসা করেছে এবং প্রতিজ্ঞা করেছে জীবনেও আর মেয়ে দেখতে যাবে না। যদি নিজের ছেলের জন্যও দেখতে যেতে হয় তবুও যাবে না।
এবার সরাসরি বিয়ে।
বাসার সবাই দেখেছে। রুদ্রের যদি পছন্দ হয় তবে সেদিনই বিয়ে। বিয়ে না হলেও পানচুনি সিউর।
রুদ্র লাল রঙের পায়জামা পাজ্ঞাবী পড়ে রেডি হয়েই গেছে। আজ যদি তালগাছ টাইপের কেউ হয় তবু সে বিয়ে করেই আসবে। এই যন্ত্রণা আর ভালো লাগে না। বিয়ে বিয়ে করে কমপক্ষে ৫০ টা রো বেশী পাত্রী তার দেখা হয়ে গেছে। একটাও মন মত হয়না।
এই দুনিয়াতে আসলে মন মত কিছুই পাওয়া যায় না। যা হোক, রুদ্রের সামনে যে মেয়েটা বসে আছে তাকে অপছন্দ করার কিছু নেই। তবে রুদ্রের একটু খটকা লাগছে, কারন পাত্রী আর পাত্রীর বড় বোন দুজনে পাশাপাশি বসে আছে, পাত্রী তেমন লজ্জা পাচ্ছে না কিন্তু পাত্রীর বড় বোন একটু একটু লজ্জা পাচ্ছে। ব্যপার না, এমনটা হতেই পারে। মেয়ের নাম টিয়া, বড় বোনের নাম রিয়া। টিয়া সব দিক দিয়েই রুদ্রের জন্য পারফেক্ট তবে বয়সটা হয়ত একটু কম।
যাহোক রুদ্র বাসার লোকদের ডেকে আলহামদুলিল্লাহ বলে দিল। সেদিন পানচুনি হবার কথা ছিল, কিন্তু পানচুনি শেষে বিয়েটাও হয়ে গেল।
বাসর ঘরে বেশ আনন্দ নিয়েই রুদ্র ঢুকল। নতুন বৌয়ের মুখ দেখার জন্য পাজ্ঞাবীর পকেটে রুপোর একটা পায়েলও নিয়ে এসেছে সে। অনেক দিনের অপেক্ষার পর শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হল, সেজন্য খুব খুশী রুদ্র। কথায় আছে না, ধৈর্যের ফল মিঠা হয়, রুদ্রের এখন কথাটা খুব বিশ্বাস করতে মন চাচ্ছে। দেরীতে হোক পারফেক্ট মেয়েটাকেই সে নিজের জন্য খুঁজে পেল তো শেষ পর্যন্ত।
রুদ্র আস্তে আস্তে বৌয়ের ঘোমটা তুলল, এবং ঘড়ি ধরে দশ মিনিট ভ্যাবচ্যাকা হয়ে বৌয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল। কারন, এ তো টিয়া নয়, টিয়ার বড় বোন রিয়া। রুদ্র ভেবেছিল, রিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে বাচ্চা কাচ্চাও হয়ত আছে। কিন্তু এ কি কান্ড!!!
এ তো রীতিমত জোচ্চুরি। কি করার আছে এখন? বিয়ে তো হয়েই গেছে। কিচ্ছু করার নেই।
রুদ্র চিন্তা ভাবনা করার শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলেছে। মাথার ভিতর রবী ঠাকুরের সেই কথাগুলো কেবল ভাসছে-
‘যা চাই, তা ভুল করে চাই
যা পাই, তা চাই না….’
আগে প্রেম টেম যা করেছে করেছে,
এবার আর কোন প্রেম টেম নয়, সরাসরি বিয়ে।
যাস্ট বিয়ে ইজ রিয়েল, বাকি সব ঘিয়েল!
কিন্তু বিয়ের বাজার যে এত চড়া রুদ্রের তা জানা ছিল না। এত মেয়ে দেখছে কিন্তু কোন মেয়েই মনের মত পাচ্ছে না। প্রেম করার জন্য হাজার হাজার মেয়ে কিন্তু বিয়ের সময় একটাও নেই। যে কোন মেয়ের সাথে প্রেম করা যায় কিন্তু বিয়ে তো আর যাকে তাকে করা যায় না। বিয়ে হচ্ছে সারাজীবনের ব্যপার স্যাপার। দেখে, শুনে, বুঝে তারপর করতে হবে।
ইদানীং নিজের উপর আর ভরসা করতে পারছে না রুদ্র। তাই সব দায় ভার পরিবারের উপর ছেড়ে দিয়েছে!!
সে শুধু গিয়ে কবুল বলবে।
কবুল! কবুল! কবুল!
টাকাও যাচ্ছে জলের মত। মেয়েকে দেখতে গেলে খালি হাতে তো আর যাওয়া যায় না, মিষ্টি নিয়ে যেতে হয়। যুগ আধুনিক হলেও এখনো মেয়েরা পানের বাটা নিয়ে,
মাথায় ঘোমটা দিয়ে সামনে আসে। পানের বাটা তো আর খালি ফেরত দেয়া যায় না…
হাজার হোক প্রেস্টিজ বলে একটা কথা আছে!!! সেটা ঠিকঠাক রাখতেই
টাকা দিতে হয়।
যে মেয়েকে বেশী ভালো লাগছে তাকে দিচ্ছে এক হাজার এক টাকা, আর যাকে কম ভালো লাগছে তাকে দিচ্ছে পাচঁশত এক টাকা।
সামনে বসা মেয়েটাকে রুদ্রের মোটামুটি রকম লাগছে। পাচঁশ দেবে নাকি হাজার, বুঝতে পারছে না।
আজকালকার গার্জিয়ানরা বেশ স্মার্ট। ছেলে মেয়েদের আলাদা কথা বলার সুযোগ করে দেয়। গার্জিয়ানদের ভাবটা এমন, যেন আজকে মেয়ে দেখতে এসেছে আর কালকেই বিয়ে।
রুদ্রকেও সেই মেয়েটার সাথে কথা বলার সুযোগ করে দেয়া হল-
রুদ্র মনে মনে সব প্রশ্ন গুছিয়ে রেখেছে, মেয়ে তো আর কম দেখেনি। কোন টাইপ মেয়েকে কি ধরনের প্রশ্ন করতে হবে রুদ্রর মুখস্ত হয়ে গেছে!!
দু’বার কেশে গলা পরিস্কার করে নিয়ে প্রশ্ন শুরু করল রুদ্র-
-নাম কি আপনার?
ফ্যানের বাতাসে ইতিমধ্যে মেয়েটার মাথার ঘোমটা সরে গেছে অথবা ইচ্ছাকৃত সরিয়ে ফেলেছে।
মেয়েটা সামনের চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দিতে দিতে উত্তর দিল-
-ঐশী জামান। ফেসবুক ভার্সন নীল বিষাদের ছায়া…
-নীল বিষাদের ছায়া কি কোন নামের ক্যাটাগরিতে পরে???
-জি, আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
বলেই মেয়েটা ফিক করে হেসে দিল।
এই প্রশ্নর সাথে হাসির কি সম্পর্ক রুদ্রর বোধগম্য হল না।
রুদ্র এবার গম্ভীর হয়ে প্রশ্ন করল-
-না কিছু না। বলছিলাম, আপনার নাম রাখার সময় কি আকীকা করা হয়েছিল??
-অবশ্যই।
-আকীকা করে নিশ্চয়ই “নীল বিষাদের ছায়া” এই টাইপ নাম রাখা হয়নি???
মেয়েটা এবার বেশ জোড়েসোড়ে হেসে উঠল।
-কি যে বলেন!!
‘নীল বিষাদের ছায়া’ কেন রাখবে। আপনাকে বললাম না, আমার নাম ঐশী জামান।
ফেসবুকে আইডি খোলার সময় কি নাম দেব, বুঝতে পারছিলাম না, তাই
নীল বিষাদের ছায়া দিয়ে খুলেছি।
আচ্ছা, আপনার ফেসবুক আইডি নেই???
-জী আছে। তবে কোন ফেইক আইডি না। আমার নামেই আমার রিয়েল আইডি আছে।
মেয়েটা এবার বেশ রেগে গেল।
-আপনি কি বলতে চাচ্ছেন বলেন তো???
আমি ফেইক….???
-সে আপনি ভালো জানেন।
.
.
.
সেদিনের মত পাত্রী দেখার সেখানেই ইতি ঘটেছিল।
পরের পাত্রী দেখতে গেল কফিশপে।
কফিতে চুমুক দিয়েই রুদ্রর থু করে ফেলে দিতে ইচ্ছে করছিল!! কফির নামে চিনির শরবত দিয়ে রেখেছে। ১৮০ টাকা দামের কফি ফেলে দিতেও মায়া লাগে। এইসব নামী দামি কফিশপে আসাই ভুল। এর চেয়ে বাড়িতে এই টাকায় চার মগ কফি বানানো যেত। টাকার কথা চিন্তা করে রুদ্রর খুব কষ্ট লাগছে!!
তাছাড়া সামনে এমন হুরপরীর মত একটা মেয়ে বসে থাকলে বিষও ঢোক করে গিলে ফেলা যায়,
এ তো সামন্য কফি নামের চিনির শরবত। রুদ্র হাজার কষ্টেও ঢোক গিলল!!!
মেয়েটাকে ভদ্রতা করে রুদ্র জিঙেস করল-
-আর কিছু খাবেন??
মেয়েটা লাজুক হাসি দিয়ে বলল-
-না। আর কিছু খাব না।
রুদ্র মেয়েটার কন্ঠস্বর শুনে মুগ্ধ। মেয়েটা দেখতে যেমন হুরপরী, কন্ঠও মাসআল্লাহ!!
গায়িকাদের মত রিনরিনে কন্ঠস্বর।
সাধারনত যেসব মেয়ে দেখতে সুন্দর হয় এদের কন্ঠস্বর সুন্দর হয় না। এর আগে একটা মেয়েকে দেখেছিল রুদ্র। দেখতে খুবই সুন্দর কিন্তু কন্ঠস্বর হাঁসের মত।
যখন কথা বলছিল, তখন মনে হচ্ছিল হাঁস কথা বলছে।
প্যাঁক! প্যাঁক! প্যাঁক!
যাক, অবশেষ রুদ্র একটা মনের মত মেয়ে খুঁজে পেল, যেমনটা সে খুঁজছিল!!
খুশীতে মনের ভিতর পায়রাগুলো বাক-বাকুম করে ডাকতে শুরু করেছে রুদ্রর। সে এবার একটু জোড় গলায় মেয়েটাকে বলল,
-লজ্জার কিছু নেই। কি খাবেন অর্ডার দিন।
মেয়েটা হাসি হাসি মুখ করে বেয়ারাকে এবার বেশ কিছু খাবার অর্ডার করল।
রুদ্রর সেদিকে খেয়াল নেই। মেয়েটার সিল্কি চুলে রুদ্রর চোখ আটকে গেছে। চুলে কৃত্রিম আলো লেগে যে প্রতিফলন হচ্ছে, রুদ্র মনযোগ দিয়ে তাই দেখছিল!!
হঠাৎ মেয়েটার কথায় ভ্রম কাটল রুদ্রর।
-কিছু বলছেন না যে??
– এ্যা! কি বলব? আমার কিছু বলার নেই।
রুদ্রের ভ্যাবাচ্যাকা অবস্থা দেখে মেয়েটা আবার খিলখিল করে হেসে উঠল! আহা! কি সুন্দর হাসি। পরান জুড়িয়ে যায়।
এরমধ্যেই খাবার দিয়ে সামনের টেবিলটা ভর্তি হয়ে গেছে। খাবারের দিকে তাকিয়ে রুদ্রের বুকের ভিতর ধ্ক করে উঠল। এত খাবার কি মেয়েটা একাই খাবে? আর বিলের কথা তো চিন্তাই করতে পারছে না!
এসব চিন্তা করতে করতেই, একটা ইয়ো ইয়ো টাইপ কম বয়সী ছেলে এসে হাজির। ছেলেটি আসার সাথে সাথে মেয়েটি রুদ্রর সাথে ছেলেটিকে পরিচয় করিয়ে দিল, নাম সজল। সজল মেয়েটির বন্ধু। একসাথে পড়াশুনা করে।
ছেলেটিকে দেখে রুদ্রর মেজাজ একশ ভোল্টে জ্বলে উঠল। পাত্রী দেখতে এসে এ কোন আপদ! ছেলেটি মেয়েটির সাথে মাখামাখি করে কথা বলছে, রুদ্রের অসহ্য লাগছে, তবুও হাসি হাসি মুখ করে আছে। দেখতে দেখতে টেবিলে রাখা সব খাবার শেষ হয়ে গেল। যাবার আগ মুহুর্তে মেয়েটি রুদ্রকে কাঁচুমাচু মুখে বলল, সজল নামের এই ছেলে তার বয়ফ্রেন্ড। বাসা থেকে জোড় করে তাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে। বিয়ের জন্য তাকে বেশী জোড়াজুড়ি করলে সে এই ছেলের সাথে পালাবে…..
রুদ্র সেদিন বাসায় এসে ২১ বার কান ধরে উঠাবসা করেছে এবং প্রতিজ্ঞা করেছে জীবনেও আর মেয়ে দেখতে যাবে না। যদি নিজের ছেলের জন্যও দেখতে যেতে হয় তবুও যাবে না।
এবার সরাসরি বিয়ে।
বাসার সবাই দেখেছে। রুদ্রের যদি পছন্দ হয় তবে সেদিনই বিয়ে। বিয়ে না হলেও পানচুনি সিউর।
রুদ্র লাল রঙের পায়জামা পাজ্ঞাবী পড়ে রেডি হয়েই গেছে। আজ যদি তালগাছ টাইপের কেউ হয় তবু সে বিয়ে করেই আসবে। এই যন্ত্রণা আর ভালো লাগে না। বিয়ে বিয়ে করে কমপক্ষে ৫০ টা রো বেশী পাত্রী তার দেখা হয়ে গেছে। একটাও মন মত হয়না।
এই দুনিয়াতে আসলে মন মত কিছুই পাওয়া যায় না। যা হোক, রুদ্রের সামনে যে মেয়েটা বসে আছে তাকে অপছন্দ করার কিছু নেই। তবে রুদ্রের একটু খটকা লাগছে, কারন পাত্রী আর পাত্রীর বড় বোন দুজনে পাশাপাশি বসে আছে, পাত্রী তেমন লজ্জা পাচ্ছে না কিন্তু পাত্রীর বড় বোন একটু একটু লজ্জা পাচ্ছে। ব্যপার না, এমনটা হতেই পারে। মেয়ের নাম টিয়া, বড় বোনের নাম রিয়া। টিয়া সব দিক দিয়েই রুদ্রের জন্য পারফেক্ট তবে বয়সটা হয়ত একটু কম।
যাহোক রুদ্র বাসার লোকদের ডেকে আলহামদুলিল্লাহ বলে দিল। সেদিন পানচুনি হবার কথা ছিল, কিন্তু পানচুনি শেষে বিয়েটাও হয়ে গেল।
বাসর ঘরে বেশ আনন্দ নিয়েই রুদ্র ঢুকল। নতুন বৌয়ের মুখ দেখার জন্য পাজ্ঞাবীর পকেটে রুপোর একটা পায়েলও নিয়ে এসেছে সে। অনেক দিনের অপেক্ষার পর শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হল, সেজন্য খুব খুশী রুদ্র। কথায় আছে না, ধৈর্যের ফল মিঠা হয়, রুদ্রের এখন কথাটা খুব বিশ্বাস করতে মন চাচ্ছে। দেরীতে হোক পারফেক্ট মেয়েটাকেই সে নিজের জন্য খুঁজে পেল তো শেষ পর্যন্ত।
রুদ্র আস্তে আস্তে বৌয়ের ঘোমটা তুলল, এবং ঘড়ি ধরে দশ মিনিট ভ্যাবচ্যাকা হয়ে বৌয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল। কারন, এ তো টিয়া নয়, টিয়ার বড় বোন রিয়া। রুদ্র ভেবেছিল, রিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে বাচ্চা কাচ্চাও হয়ত আছে। কিন্তু এ কি কান্ড!!!
এ তো রীতিমত জোচ্চুরি। কি করার আছে এখন? বিয়ে তো হয়েই গেছে। কিচ্ছু করার নেই।
রুদ্র চিন্তা ভাবনা করার শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলেছে। মাথার ভিতর রবী ঠাকুরের সেই কথাগুলো কেবল ভাসছে-
‘যা চাই, তা ভুল করে চাই
যা পাই, তা চাই না….’