no image
 পাত্রী দেখা
 - সুখ সাহারা  ( রেবেকা আক্তার রুমা )

মায়ের সাথে পাত্রী দেখতে এসেছে রুদ্র। নাহ বিয়েটা এবার করে ফেলা দরকার। মেঘে মেঘে বেলা তো আর কম হল না।
আগে প্রেম টেম যা করেছে করেছে,
এবার আর কোন প্রেম টেম নয়, সরাসরি বিয়ে।
যাস্ট বিয়ে ইজ রিয়েল, বাকি সব ঘিয়েল!

কিন্তু বিয়ের বাজার যে এত চড়া রুদ্রের তা জানা ছিল না। এত মেয়ে দেখছে কিন্তু কোন মেয়েই মনের মত পাচ্ছে না। প্রেম করার জন্য হাজার হাজার মেয়ে কিন্তু বিয়ের সময় একটাও নেই। যে কোন মেয়ের সাথে প্রেম করা যায় কিন্তু বিয়ে তো আর যাকে তাকে করা যায় না। বিয়ে হচ্ছে সারাজীবনের ব্যপার স্যাপার। দেখে, শুনে, বুঝে তারপর করতে হবে।

ইদানীং নিজের উপর আর ভরসা করতে পারছে না রুদ্র। তাই সব দায় ভার পরিবারের উপর ছেড়ে দিয়েছে!!
সে শুধু গিয়ে কবুল বলবে।
কবুল! কবুল! কবুল!

টাকাও যাচ্ছে জলের মত। মেয়েকে দেখতে গেলে খালি হাতে তো আর যাওয়া যায় না, মিষ্টি নিয়ে যেতে হয়। যুগ আধুনিক হলেও এখনো মেয়েরা পানের বাটা নিয়ে,
মাথায় ঘোমটা দিয়ে সামনে আসে। পানের বাটা তো আর খালি ফেরত দেয়া যায় না…
হাজার হোক প্রেস্টিজ বলে একটা কথা আছে!!! সেটা ঠিকঠাক রাখতেই
টাকা দিতে হয়।
যে মেয়েকে বেশী ভালো লাগছে তাকে দিচ্ছে এক হাজার এক টাকা, আর যাকে কম ভালো লাগছে তাকে দিচ্ছে পাচঁশত এক টাকা।

সামনে বসা মেয়েটাকে রুদ্রের মোটামুটি রকম লাগছে। পাচঁশ দেবে নাকি হাজার, বুঝতে পারছে না।

আজকালকার গার্জিয়ানরা বেশ স্মার্ট। ছেলে মেয়েদের আলাদা কথা বলার সুযোগ করে দেয়। গার্জিয়ানদের ভাবটা এমন, যেন আজকে মেয়ে দেখতে এসেছে আর কালকেই বিয়ে।

রুদ্রকেও সেই মেয়েটার সাথে কথা বলার সুযোগ করে দেয়া হল-

রুদ্র মনে মনে সব প্রশ্ন গুছিয়ে রেখেছে, মেয়ে তো আর কম দেখেনি। কোন টাইপ মেয়েকে কি ধরনের প্রশ্ন করতে হবে রুদ্রর মুখস্ত হয়ে গেছে!!

দু’বার কেশে গলা পরিস্কার করে নিয়ে প্রশ্ন শুরু করল রুদ্র-

-নাম কি আপনার?

ফ্যানের বাতাসে ইতিমধ্যে মেয়েটার মাথার ঘোমটা সরে গেছে অথবা ইচ্ছাকৃত সরিয়ে ফেলেছে।
মেয়েটা সামনের চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দিতে দিতে উত্তর দিল-

-ঐশী জামান। ফেসবুক ভার্সন নীল বিষাদের ছায়া…

-নীল বিষাদের ছায়া কি কোন নামের ক্যাটাগরিতে পরে???

-জি, আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
বলেই মেয়েটা ফিক করে হেসে দিল।
এই প্রশ্নর সাথে হাসির কি সম্পর্ক রুদ্রর বোধগম্য হল না।

রুদ্র এবার গম্ভীর হয়ে প্রশ্ন করল-

-না কিছু না। বলছিলাম, আপনার নাম রাখার সময় কি আকীকা করা হয়েছিল??

-অবশ্যই।

-আকীকা করে নিশ্চয়ই “নীল বিষাদের ছায়া” এই টাইপ নাম রাখা হয়নি???

মেয়েটা এবার বেশ জোড়েসোড়ে হেসে উঠল।

-কি যে বলেন!!
‘নীল বিষাদের ছায়া’ কেন রাখবে। আপনাকে বললাম না, আমার নাম ঐশী জামান।
ফেসবুকে আইডি খোলার সময় কি নাম দেব, বুঝতে পারছিলাম না, তাই
নীল বিষাদের ছায়া দিয়ে খুলেছি।
আচ্ছা, আপনার ফেসবুক আইডি নেই???

-জী আছে। তবে কোন ফেইক আইডি না। আমার নামেই আমার রিয়েল আইডি আছে।

মেয়েটা এবার বেশ রেগে গেল।

-আপনি কি বলতে চাচ্ছেন বলেন তো???
আমি ফেইক….???

-সে আপনি ভালো জানেন।
.
.
.
সেদিনের মত পাত্রী দেখার সেখানেই ইতি ঘটেছিল।
পরের পাত্রী দেখতে গেল কফিশপে।

কফিতে চুমুক দিয়েই রুদ্রর থু করে ফেলে দিতে ইচ্ছে করছিল!! কফির নামে চিনির শরবত দিয়ে রেখেছে। ১৮০ টাকা দামের কফি ফেলে দিতেও মায়া লাগে। এইসব নামী দামি কফিশপে আসাই ভুল। এর চেয়ে বাড়িতে এই টাকায় চার মগ কফি বানানো যেত। টাকার কথা চিন্তা করে রুদ্রর খুব কষ্ট লাগছে!!

তাছাড়া সামনে এমন হুরপরীর মত একটা মেয়ে বসে থাকলে বিষও ঢোক করে গিলে ফেলা যায়,
এ তো সামন্য কফি নামের চিনির শরবত। রুদ্র হাজার কষ্টেও ঢোক গিলল!!!

মেয়েটাকে ভদ্রতা করে রুদ্র জিঙেস করল-

-আর কিছু খাবেন??

মেয়েটা লাজুক হাসি দিয়ে বলল-

-না। আর কিছু খাব না।

রুদ্র মেয়েটার কন্ঠস্বর শুনে মুগ্ধ। মেয়েটা দেখতে যেমন হুরপরী, কন্ঠও মাসআল্লাহ!!
গায়িকাদের মত রিনরিনে কন্ঠস্বর।

সাধারনত যেসব মেয়ে দেখতে সুন্দর হয় এদের কন্ঠস্বর সুন্দর হয় না। এর আগে একটা মেয়েকে দেখেছিল রুদ্র। দেখতে খুবই সুন্দর কিন্তু কন্ঠস্বর হাঁসের মত।
যখন কথা বলছিল, তখন মনে হচ্ছিল হাঁস কথা বলছে।
প্যাঁক! প্যাঁক! প্যাঁক!

যাক, অবশেষ রুদ্র একটা মনের মত মেয়ে খুঁজে পেল, যেমনটা সে খুঁজছিল!!

খুশীতে মনের ভিতর পায়রাগুলো বাক-বাকুম করে ডাকতে শুরু করেছে রুদ্রর। সে এবার একটু জোড় গলায় মেয়েটাকে বলল,

-লজ্জার কিছু নেই। কি খাবেন অর্ডার দিন।

মেয়েটা হাসি হাসি মুখ করে বেয়ারাকে এবার বেশ কিছু খাবার অর্ডার করল।

রুদ্রর সেদিকে খেয়াল নেই। মেয়েটার সিল্কি চুলে রুদ্রর চোখ আটকে গেছে। চুলে কৃত্রিম আলো লেগে যে প্রতিফলন হচ্ছে, রুদ্র মনযোগ দিয়ে তাই দেখছিল!!
হঠাৎ মেয়েটার কথায় ভ্রম কাটল রুদ্রর।

-কিছু বলছেন না যে??
– এ্যা! কি বলব? আমার কিছু বলার নেই।

রুদ্রের ভ্যাবাচ্যাকা অবস্থা দেখে মেয়েটা আবার খিলখিল করে হেসে উঠল! আহা! কি সুন্দর হাসি। পরান জুড়িয়ে যায়।

এরমধ্যেই খাবার দিয়ে সামনের টেবিলটা ভর্তি হয়ে গেছে। খাবারের দিকে তাকিয়ে রুদ্রের বুকের ভিতর ধ্ক করে উঠল। এত খাবার কি মেয়েটা একাই খাবে? আর বিলের কথা তো চিন্তাই করতে পারছে না!

এসব চিন্তা করতে করতেই, একটা ইয়ো ইয়ো টাইপ কম বয়সী ছেলে এসে হাজির। ছেলেটি আসার সাথে সাথে মেয়েটি রুদ্রর সাথে ছেলেটিকে পরিচয় করিয়ে দিল, নাম সজল। সজল মেয়েটির বন্ধু। একসাথে পড়াশুনা করে।

ছেলেটিকে দেখে রুদ্রর মেজাজ একশ ভোল্টে জ্বলে উঠল। পাত্রী দেখতে এসে এ কোন আপদ! ছেলেটি মেয়েটির সাথে মাখামাখি করে কথা বলছে, রুদ্রের অসহ্য লাগছে, তবুও হাসি হাসি মুখ করে আছে। দেখতে দেখতে টেবিলে রাখা সব খাবার শেষ হয়ে গেল। যাবার আগ মুহুর্তে মেয়েটি রুদ্রকে কাঁচুমাচু মুখে বলল, সজল নামের এই ছেলে তার বয়ফ্রেন্ড। বাসা থেকে জোড় করে তাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে। বিয়ের জন্য তাকে বেশী জোড়াজুড়ি করলে সে এই ছেলের সাথে পালাবে…..

রুদ্র সেদিন বাসায় এসে ২১ বার কান ধরে উঠাবসা করেছে এবং প্রতিজ্ঞা করেছে জীবনেও আর মেয়ে দেখতে যাবে না। যদি নিজের ছেলের জন্যও দেখতে যেতে হয় তবুও যাবে না।

এবার সরাসরি বিয়ে।
বাসার সবাই দেখেছে। রুদ্রের যদি পছন্দ হয় তবে সেদিনই বিয়ে। বিয়ে না হলেও পানচুনি সিউর।

রুদ্র লাল রঙের পায়জামা পাজ্ঞাবী পড়ে রেডি হয়েই গেছে। আজ যদি তালগাছ টাইপের কেউ হয় তবু সে বিয়ে করেই আসবে। এই যন্ত্রণা আর ভালো লাগে না। বিয়ে বিয়ে করে কমপক্ষে ৫০ টা রো বেশী পাত্রী তার দেখা হয়ে গেছে। একটাও মন মত হয়না।

এই দুনিয়াতে আসলে মন মত কিছুই পাওয়া যায় না। যা হোক, রুদ্রের সামনে যে মেয়েটা বসে আছে তাকে অপছন্দ করার কিছু নেই। তবে রুদ্রের একটু খটকা লাগছে, কারন পাত্রী আর পাত্রীর বড় বোন দুজনে পাশাপাশি বসে আছে, পাত্রী তেমন লজ্জা পাচ্ছে না কিন্তু পাত্রীর বড় বোন একটু একটু লজ্জা পাচ্ছে। ব্যপার না, এমনটা হতেই পারে। মেয়ের নাম টিয়া, বড় বোনের নাম রিয়া। টিয়া সব দিক দিয়েই রুদ্রের জন্য পারফেক্ট তবে বয়সটা হয়ত একটু কম।

যাহোক রুদ্র বাসার লোকদের ডেকে আলহামদুলিল্লাহ বলে দিল। সেদিন পানচুনি হবার কথা ছিল, কিন্তু পানচুনি শেষে বিয়েটাও হয়ে গেল।

বাসর ঘরে বেশ আনন্দ নিয়েই রুদ্র ঢুকল। নতুন বৌয়ের মুখ দেখার জন্য পাজ্ঞাবীর পকেটে রুপোর একটা পায়েলও নিয়ে এসেছে সে। অনেক দিনের অপেক্ষার পর শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হল, সেজন্য খুব খুশী রুদ্র। কথায় আছে না, ধৈর্যের ফল মিঠা হয়, রুদ্রের এখন কথাটা খুব বিশ্বাস করতে মন চাচ্ছে। দেরীতে হোক পারফেক্ট মেয়েটাকেই সে নিজের জন্য খুঁজে পেল তো শেষ পর্যন্ত।

রুদ্র আস্তে আস্তে বৌয়ের ঘোমটা তুলল, এবং ঘড়ি ধরে দশ মিনিট ভ্যাবচ্যাকা হয়ে বৌয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল। কারন, এ তো টিয়া নয়, টিয়ার বড় বোন রিয়া। রুদ্র ভেবেছিল, রিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে বাচ্চা কাচ্চাও হয়ত আছে। কিন্তু এ কি কান্ড!!!
এ তো রীতিমত জোচ্চুরি। কি করার আছে এখন? বিয়ে তো হয়েই গেছে। কিচ্ছু করার নেই।

রুদ্র চিন্তা ভাবনা করার শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলেছে। মাথার ভিতর রবী ঠাকুরের সেই কথাগুলো কেবল ভাসছে-

‘যা চাই, তা ভুল করে চাই
যা পাই, তা চাই না….’
উৎসাহ | হুতুম পেঁচা | বাংলা কবিতা
উৎসাহ
-- হুতুম পেঁচা

আমি উৎসাহ চাই,
মাঝে মাঝে লজ্জা পাও চুপ থাকো,
ভালোই লাগে আমার ...
তবে কাপা কাপা ঠোট আধবোজা চোখ
আর আদুরে হাতে যদি জরিয়ে ধরতে ...
তবে উপায় থাকতোনা ফিরাবার!!

আমি উৎসাহ চাই,
তোমার মুখেই শুনতে চাই কতটা চাও
আমাকে আমার কাছে...
জানি তোমার সবটুকু দিতে চাও তুমি,
আমাকেও চাও যা আছে সবটাই,
তবুও বলনা কতটা নেবার আছে!!

আমি উৎসাহ চাই,
আরো বেশী ভালোবাসা আদর দিয়ে তোমায়
রাখতে চাই সুখে ...
যা আছে মনে তোমার আমায় বলো,
আর হাজার লক্ষ কোটিবার ভালোবাসি
ভালোবাসি শুনতে চাই তোমার মুখে!!


একটাই তুই আমার | নাজমা সরকার
"একটাই তুই আমার"
- নাজমা সরকার

তোর মন সাগরে বৈঠা হাতে,
নৌকো বেয়ে যাবো অচিন দেশে।
সেই দেশেতে থাকবে না,
কেউ তুই আর আমি ছাড়া।
তুই আমার অবুঝ চোখের তারা,
তুই আমার মনের না বলা ভাষা।
তোর চোখে বুনেছি স্বপ্ন হাজার,
তুই আমার সুখের ঠিকানা।
তুই মেঘলা আকাশে অধ্যচন্দ্র
তুই রাতের আকাশে একটাই ধ্যুবতারা
তুই সূর্য উঠা ভোর আমার,
তুই গোটা আকাশে,,,
তারা ভরা রাত্রি,,।
গোটা পৃথিবীতে যেমন একটাই'রব'।
তেমনি একটাই তুই আমার।
তোর জন্য পৃথিবীতে আসা,
তোর জন্যই মূলত আজও,
বেঁচে থাকা,,,,,
"তাই একটাই তুই আমার,
একটাই তুই আমার"।
তুইয়ি বেঁচে থাকার কারণ।
" প্রিয় অদ্ভুত"


no image
মহান সৃষ্টিকর্তা 
 - তাছনীম বিন আহসান

মিষ্টি ভোরে পাখি ডাকে
রবি জাগে পুবাকাশে,
ওরা সদা তৎপর থাকে
রবের নামটি প্রকাশে!
"তুমি মহান অসীম দয়ালু প্রভু,
তোমার মহীমা থেকে যেন নিরাশ হইনা কভু!"
ক্লান্ত দুপুরে বৃক্ষ রাজি
কার ইশারায় দেয় ছায়া,
এই জীবনা সকল কিছু
সবই মহান রবের দয়া!
"তুমি মহান অসীম দয়ালু প্রভু,
তোমার মহীমা থেকে যেন নিরাশ হইনা কভু!"
সন্ধ্যা এলে জোনাক পোকা
আলোর খেলায় মাতে,
রবের সৃষ্টি পৃথিবীর সব
ভরা হাজার রহস্যতে!
"তুমি মহান অসীম দয়ালু প্রভু,
তোমার মহীমা থেকে যেন নিরাশ হইনা কভু!"
রাতের আকাশে কোটি তারা
চাঁদ বিলায় জোসনা,
জানার নেইতো কোন শেষ
যতই করি সাধনা!
"তুমি মহান অসীম দয়ালু প্রভু,
তোমার মহীমা থেকে যেন নিরাশ হইনা কভু!"
স্বীকারোক্তি | তাছনীম বিন আহসান
স্বীকারোক্তি
- তাছনীম বিন আহসান

দুরে ঠেলে দিয়েছো বলে কষ্ট পেয়েছি
কিন্তু ঘৃণা করিনি তোমায়,
পর করে দিয়েছো বলে দুরে যায়নি
নিঃস্বার্থে ভালোবেসেছি তোমায়!

পাওয়ার লোভ ছিলনা মনে আমার
শুধু চোখে ছিল স্বপ্ন আঁকা,
তোমায় বাঁচিয়ে রেখেছি মনে আজও
যদিও তুমি দিয়েছো শুধুই ধোকা!

দিয়েছো ব্যাথা ভরা অবহেলা শতবার
তবুও নিয়েছি অবধি সব মেনে,
প্রহসন শুধু করেছো তুমি প্রিয় আমার
তবুও তোমায় বাসি ভালো রাখো জেনে!




শেষ প্রশ্ন | তাছনীম বিন আহসান
শেষ প্রশ্ন
-- তাছনীম বিন আহসান

যদি আমি হারিয়ে যাই
আমায় কি খুঁজবে?
আকাশের তারায় কিংবা দিঘীর জলে
সোনালী সুর্যে কিংবা রুপালি চাঁদের আলোয়
খুঁজবে কি অধীর আগ্রহ নিয়ে?
যদি আমি হারিয়ে যাই
একলা কি লাগবে?
তোমার নিরব রাতে কিংবা কোকীল ডাকা দুপুরে
বৃষ্টির রাতে কিংবা পরন্ত বিকেল বেলায়
খুব একলা হয়ে ভিজে উঠবে কি চোখ তোমার?
যদি আমি হারিয়ে যাই
সুর কি হবে?
নিঃসঙ্গ রাখালের করুণ বাশের বাঁশিতে
কিংবা উদাস বাউলের কোন বিরহী গানে
সুর হবে কি শীতের শুকনো ঝরা পাতার?
যদি আমি হারিয়ে যাই
তুমি কি কাঁদবে?
নিশ্চুপ গভীর রাতে একলা নিরবে
কিংবা উদাস দুপুরে ব্যালকনিতে বসে
কাঁদবেকি আমায় হারানোর ব্যাথায়?
যদি আমি হারিয়ে যাই
তখন কি ভালোবাসবে?
নিজের ভুল বুঝতে পেরে অসহায় হয়ে
কিংবা আমার না থাকার শুন্যতার অনুভবে
বাসবে ভালো কি হারিয়ে ফেলা আমাকে?

no image
কে কোথায় আছিস?
কেমন আছিস?
খুব মনে পরে আকাশি পান্জাবী আর সাদা পাজামার দিন গুলা,
মনে পরে দুঃসাহস দেখিয়ে প্যান্ট পরে মাদ্রাসায় যাওয়ার দিন গুলা,
মনে পরে পরে হুজুরদের দেয়া শাস্তি গুলা...

কে কোথায় আছিস?
কেমন আছিস?
মনে পরে দেরিতে ক্লাসে ঢুকে মার খাওয়ার দিন গুলা,
মনে পরে হাজার ভয় নিয়ে তোর জন্য রোল কলে প্রক্সি দেয়ার দিন গুলা,
মনে পরে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে দেয়াল ডিঙ্গানোর দিন গুলা...

কে কোথায় আছিস?
কেমন আছিস?
মনে পরে টিফিনের সময় হাজারো দুষ্টামির দিন গুলা,
মনে পরে জোহরের নামাজের আগে ওজুখানায় করা দুষ্টামি গুলা,
মনে পরে টিফিনের পরের ক্লাসে ঝিমানোর দিনগুলা...

কে কোথায় আছিস?
কেমন আছিস?
জানিস এখনও খুব মনে পরে তোদেরকে,
তোদের সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্তকে,
আমাদের দাখিলের বন্ধুদেরকে...

কে কোথায় আছিস?
কেমন আছিস?
জীবনের নিষ্ঠুর পথে কাটায় পা রেখে চলতে হয় এখন,
বাস্তবের কঠরতায় সাজাতে হয় নিজের জীবন,
তবুও প্রতিটা মুহূর্তে অনুভব করি তোদেরকে কতটা প্রয়োজন...

কে কোথায় আছিস?
কেমন আছিস?
 


( ডেডিকেটেট টু : ধাপ সাতগাড়া বা.মু.ম.কা. মাদ্রাসা , দাখিল ২০১১ ব্যাচের সকল বন্ধুদের <3 )
অহংকার | তাছনীম বিন আহসান
অহংকার
 -- তাছনীম বিন আহসান
যখন আর কিছুই থাকবেনা
শুধু থাকবে পৃথিবী
আর থাকবো আমি,
যখন আর কিছুই থাকবেনা
বন্ধু তুই থাকিস
কিছুই চাইনা আমি!

যখন থাকবে শুধু একাকীত্ব
তুই দিস সঙ্গ
দিস ভালোবাসা,
যখন থাকবে শুধু নিরাশা
তুই ধরিস হাত
দিস অনেক ভরসা!

যখন আসবে কঠিন ঝড়
দিসনা হারাতে কভু
একটু দিস আশ্রয়,
যখন ভাসবো অকুল সাগরে
কাছে কাছে থাকিস
পাইনা যেন ভয়!

যখন করবোনা নিজেকেও বিশ্বাস
সব হারিয়েও শুধু
তোকেই চাইবো কাছে,
যখন আর কিছুই থাকবেনা
তবুও আমি জানবো
বন্ধু আমার আছে!

প্রিয় অনুরোধ | তাছনীম বিন আহসান
প্রিয় অনুরোধ
 -- তাছনীম বিন আহসান

তুমি পাখি হবে?
শুধু আমার সকালে,
ঘুম যেন ভাঙ্গে তোমার কন্ঠে মধুর গান শুনে,

তুমি ছায়া হবে?
শুধু আমার পথের পাশে,
ক্লান্ত আমায় শান্তি দেবে অনেক ভালোবেসে,

তুমি ফুল হবে?
সাঁঝের বেলা আমার আঙিনায়,
গন্ধে তোমার ভরিয়ে দেবে আমায় ভিষন মায়ায়,

তুমি ছবি হবে?
আমার মনের আকাশের নিহারীকায়,
রাতগুলো সব সাজিয়ে দেবে পরম মমতায়,

তুমি আমার হবে?
শুধু আমার মনের মাঝে,
থাকবে জরিয়ে রাত সকাল দুপুর এবং সাঁঝে,



no image
পরপারে চলে যাওয়া মা'য়ের কাছে, পৃথিবীতে একলা হয়ে যাওয়া ছেলের চিঠি
উৎসর্গ করলাম সেই সমস্ত সন্তানদের, যাদের #মা ছাড়া প্রতিটা মুহুর্ত শুন্য মনে হয় পৃথিবী
 


ও মামনি! মা!
আমি জানি তুমি আমার ডাক শুনতে পাও, কিন্তু জান্নাতের ওই ঘর থেকে তুমি সারা দিতে পারনা। হুম, আমিতো সবসময় আল্লাহর কাছে দুয়া করি যেন তোমায় জান্নাতে রাখেন, খুব সুখে খুব আদরে, ঠিক যেমন আদরে তুমি আমাকে তোমার বুকে আগলে রাখতে, যেমন যত্নে তোমার কোলে শোয়ায় রাখতে।
আর আমি জানি আল্লাহ তোমায় জান্নাতেই রাখছেন, মায়ের জন্যে সন্তানের দোয়াতো আল্লাহ কবুল করেন, তাইনা মামনি?
মা, জানো আমি সকালে খুব দেরী করে ঘুম থেকে উঠি, রাতে ঘুমাইনা যে, জানইতো রাত জেগে বই পড়ি আর কবিতা লিখি, তাই, কিন্তু সকালে এখন আর কেউ ঘুম ভাঙায়না, কেউ বলেনা "নবাবের কি ঘুম শেষ হয়না, খাইতে হবেনা?"
ঘুম থেকে উঠলে এখন আর কেউ দাত ব্রাশ না করার জন্য বকা দেয়না...
একা একাই খেয়ে নিতে হয়, আর কারো কাছে আবদার করতে পারিনা, কাউকে বলতে পারিনা "খাওয়ায় দাও" বলে। ভাতের থালা নিয়ে এখনও বসে থাকি চুপচাপ, কেউ ধমক দিয়ে বলেনা " তাড়াতাড়ি খা, ভাত গুলাতো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে"...
ও মা, বাহিরে বের হবার সময় কেউ এখন বলেনা "গোসল করে বের হবি", কেউ বলেনা "এই ময়লা টি শার্টটা পরতেছিস কেনো, অন্য একটা পর, এটা আজ ধুয়ে দেব"...
হাসিমুখে বাসা থেকে বের হতে পারিনা এখন, তোমার হাসি মুখটা যে দেখিনা!
মামনি, বাহির থেকে বাসায় ফিরে এখনো ভুল করে তোমার ঘরের দিকে চলে যাই, তারপর চমকে উঠি, তুমিতো নেই, কার কোলে শুয়ে সারাদিনে কি কি করছি সেই গল্প বলবো,
কে আমাকে বলবে "তোর গায়ে ঘামের গন্ধ করতেছে, যা আগে জামা কাপর পালটে হাত মুখ ধুয়ে আয়"...
কে আমায় সারাদিন বাইরে বাইরে ঘোরার জন্য বকা দেবে, কে জিজ্ঞেস করবে সারাদিন কি খাইছি আমি, তুমিতো আল্লাহর কাছে চলে গেছ, আমাকে কেন রেখে গেলে মা, আমার যে খুব একলা লাগে...
রাতের খাবারটা খাইতে একদম ইচ্ছা করেনা, একা একা খেতে হয় যে, না না, ভুল হলো কালো বিড়ালটা পাশে বসে থাকে, তবুও খেতে ইচ্ছে করেনা, বসে থাকি খাবার নিয়ে, কেউ বকা দিতে আসেনা...
মা জানো কতদিন বিছানাটা গোছাইনা, কেউ এখন আর বলেনা "এত অলস হয় মানুষ, বিছানাটাও গোছাইসনা"...
এলোমেলো বিছানাতেই শুয়ে পরি, কোন একটা গল্পের বই পড়তে পড়তে কিংবা কবিতা লিখতে লিখতেই ঘুমায় পরি,
মাঝ রাতে কেউ এসে বকা দিয়ে গল্পের বইটা কেড়ে নিয়ে যায় না, কই তুমি মামনি, তোমায় যে খুব মনে পরে মা...
মা, শীতের সকাল গুলাতে এখনো ভাপা পিঠা খেতে ইচ্ছে করে, কিন্তু কেউ বোঝেনা,
চৈত্রের দুপুরে রোদে ঘুরে ঘুরে ক্লান্তি নিয়ে বাসায় ফিরে এখনও বেলের শরবত খেতে ইচ্ছে করে, কিন্তু কে বানায় খাওয়াবে বেলের শরবত?
জানো মা, বর্ষার বৃষ্টি ভেজা দিন গুলাতে এখনো চাল ভাজা আর সিম বিচি ভাজা খেতে খুব খেতে ইচ্ছে করে, কিন্তু কে ভেজে দিবে বলো?
বিছানায় শুয়ে কোন একটা বইয়ে পার করে দেই বৃষ্টির দিন, কিংবা মন চাইলেই ভিজি বৃষ্টির ধারায়, কেউ আর তোমার মত আদর মেখে বকা দিয়ে বলেনা "অসুস্থ হলে বৃষ্টিতে ভেজার মজা বুঝাবো"...
মা, আমি খুব একলা হয়ে গেছি...
মামনি, তুমি জান্নাতে থেকে আমার সব বোকামি পাগলামি আর অনিয়ম দেখে খুব বকা দাও, তাইনা?
কি করবো বলো, তুমিতো জানোই তোমার এই পাগল ছেলেটা এমনি, কেউ আগলে না রাখলে সে কতটা আসহায় সেটাতো তুমিই বেশী জানো। কিন্তু মা তুমি দেখো, তোমার এই পাগল ছেলাটা ঠিক চালাক হয়ে যাবে, সব নিয়ম মত করবে, ঠিক নিজের যত্ন নিবে, তুমি দেখে নিও মা,
মা, তুমি জান্নাতে ভালো থাকো, আমাকে নিয়ে একদম দুশ্চিন্তা করবেনা, আমি বড় হয়ে গেছিনা এখন, আমি সব সামলে নিতে পারবো, তুমি শুধু তোমার পাগল ছেলেটাকে দোয়া করো।

তোমার খুব আদরের
ছোট্ট পাগল ছেলেটা
.

★★★★★★★★★★★
© তাছনীম বিন আহসান
★★★★★★★★★★★

আদিপ্রাণ | মাহিগঞ্জ সাহিত্য সংসদ

মোট দর্শন